শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০৫:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪ ৩৯ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট : শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ডা. এমএ জলিলের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম, কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের মাঝে গ্রæপিং করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতা। সকালে এক কথা বললে বিকালে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। ঢাকায় অবস্থান করে কমিটি ও শিক্ষকদের কোন সিদ্ধান্ত জানিয়ে পরে তা অস্বীকার করাসহ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, দুই বারের বেশি সভাপতি থাকার নিয়ম না থাকলেও তিনি একাধিক বার সভাপতির পদে আসীন থেকে প্রতিষ্ঠানকে নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্য, সাবেক অধ্যক্ষ মাও. ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমান সভাপতির কথা ও কাজের কোন ব্যালেন্স নেই। তিনি যখন যা মনে করেন। তখন তাই বলেন। তার মস্তিস্ক সুস্থতা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। সভাপতি ঢাকায় অবস্থান করার কারণে প্রতিষ্ঠানের কোন কার্যক্রমে তার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকেই না বরং তাকে অবহিত করলে তিনি বলেন, আপনারা সিদ্ধান্ত নেন আমি পরে স্বাক্ষর করে দিব। অথচ পরে স্বাক্ষর না করে পাল্টা অভিযোগ করেন। আমি জানিনা বা আমাকে জানানো হয়নি কেন? তিনি ফোনে কথা বলে ও বাসায় ডেকে পৃথক পৃথক ভাবে কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক গ্রæপিং সৃষ্টি করেছেন। বর্তমান অধ্যক্ষ তার এহেন কর্মকান্ড নিয়ে কমিটির মুখোমুখি হলে তিনি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সভাপতি সাহেব সকল অনৈতিক পরিসমাপ্তি ঘটান তার ভাইপো শহিদ প্রফেসরের মাধ্যমে। তিনি পরিকল্পিতভাবে মাদ্রাসা ও মসজিদের ক্যাম্পাসের মাঝখানে বিল্ডিং তৈরি করে মাদ্রাসা ও মসজিদকে দিখন্ডিত করেছেন। আমি দীর্ঘদিন সুপার ছিলাম। তিনি আমাকে পুঁতুল বানিয়ে রেখেছিলেন। আমি দুর্বল ও অসহায় ছিলাম তাই প্রতিবাদ করিতে পারি নাই। এখনই সভাপতি তার আপন ভাতিজার দুই মেয়েকে নিয়োগ দিতে বেপরোয়া হয়েছেন। শিক্ষক প্রতিনিধি কমিটির অন্যতম সদস্য, আনছার আলী বলেন, উপাধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে সভাপতি সাহেব যথারীতি অভিনব ও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ পদের দাবীদার মাও. শাহজাহান সিরাজকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান দূরে যাক বরং মাও. শাহাজাহানের রুঢ় আচরণ কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করা, সভাপতি ও তৎকালীন অধ্যক্ষকে গালিগালাজ মারপিট করার মতো অপরাধে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা সহ একাধিক মামলার আসামী হওয়ায় সভাপতি, ডা. এমএ জলিল তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি রেজুলেশন করেন, এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে এই মর্মে স্বাক্ষর করেন যে, তিনি কখনো এহেন জঘন্যতম অন্যায় কাজ করবেন না এবং বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, যদি আর কখনো এহেন অন্যায় কাজ করি তাহলে গভর্নিং বডি যে কোন সময় তাকে চাকরি থেকে বহিস্কার করিতে পারিবেন। মাও. শাহজাহান সিরাজ আরো অঙ্গীকার করেন আমি জীবনে কখনো উচ্চতর পদ দাবী করিব না। অথচ বর্তমান সভাপতি তার স্বার্থে আবার মাও. শাহজাহান সিরাজের পক্ষ নিয়েছেন। মাও. শাহজাহান সিরাজ ৬/৭টা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার চার্চশীটভুক্ত আসামী। দীর্ঘ ৩০বছরের বর্তমান সভাপতির কার্যক্রম আমার কাছে প্রতিষ্ঠান বান্ধব বলে মনে হয়নি। কমিটির সদস্য শিক্ষক প্রতিনিধি আবু তৌহিদ বলেন-সভাপতি সাহেব ফোনে আমার সাথে অত্যন্ত বাজে ভাষায় মন্তব্য করেন। তিনি অধ্যক্ষ আমাকে ও প্রভাষক শফিকুল ইসলামকে চোর বলে আখ্যায়িত করেন। অধ্যক্ষ সাহেবকে নিয়ে সভাপতি তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসিকতা নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য ও বক্তব্য দিচ্ছেন তার কোন সত্যতা ও বাস্তবতা খুঁজে পাই না। কমিটির সদস্য অভিভাবক প্রতিনিধি প্রভাষক রবিউল ইসলাম বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছর উনি সভাপতি। শুনেছি, সভাপতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। ১৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল, ২৫জন সচিবের সাথে সম্পর্ক কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিষ্ঠানের কোন উন্নয়ন দেখলাম না। সরকারি বা ব্যক্তিগত একটা বিল্ডিং দেখলাম না। মাদ্রাসার কোন মিটিংয়ে ওনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অভিভাবক সদস্য, মাওলানা আবুজার বলেন-সভাপতি সম্পর্কে ব্যাপক গুঞ্জন শুনি, উনি ঢাকায় থাকেন খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি জানি একটা বেতন বিল স্বাক্ষর করতে গেলেও ঢাকায় যাওয়া লাগে। আমার মতে সভাপতি স্থানীয় হওয়া খুব দরকার। বর্তমান অধ্যক্ষ আসার পর মাদ্রাসার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আলিম স্তর এমপিও হয়েছে। ফাজিল স্বীকৃতি ও কামিল অনুমতি লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু বর্তমান সভাপতি তাঁর কাজের অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছেন। আরবী প্রভাষক মাও. শফিকুল ইসলাম বলেন-গভর্নিং বডির সভাপতি ডা. এম.এ জলিল সাহেবকে আমি একজন জ্ঞানী ও ভদ্র মানুষ হিসেবে জানি ও চিনি। কিন্তু শ্যামনগর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা সংক্রান্ত উনার সার্বিক কার্যক্রমে আমি রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা মেরে গেছি। গভর্নিং বডির মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের রেজুলেশন স্বাক্ষর করতে নিয়ে গেলে স্বাক্ষর না করে মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের বাহিরে কিছু এজেন্ডা যোগ করতে বলেন, অধ্যক্ষ সাহেব মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে এজান্ডা যোগ করতে নারাজ হলে রেজুলেশন ছিঁড়ে ফেলেন। এমন কার্যক্রম আমার কাছে বিরল মনে হয়। অধ্যক্ষ মাওলামা এ.এ.এম ওজায়েরুল ইসলাম বলেন-সভাপতি সাহেবের প্রতি আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। সব সময় ওনার সাথে যোগাযোগ করে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে উনি প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারেন না। ঢাকায় গিয়ে স্বাক্ষর নিতে চাইলেও খুঁজে পেতে খুব কষ্ট হয়। স¤প্রতি তিনি আমার বিরুদ্ধে কিছু অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন শুনে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়েছি। সভাপতি হিসাবে কথা থাকলে গর্ভনিং বডিকে সাথে নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার তো সুযোগ ছিল। দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে এহেন আচরণ আমাকে মর্মাহত করেছে। সাবেক অধ্যক্ষ মাও. ইসমাইল হোসেন সাহেবের ব্যাপারে সভাপতি সাহেব বলেছেন। তাহার সময় কোন অভিযোগ বা কোন সমস্য ছিল না। মাও. ইসমাইল হোসেন সাহেবের বক্তব্য শুনলে বাস্তবতা বুঝা যাবে। কিছু কিছু ব্যাপারে তিনি কমিটির সাথে মিটিং বা পরামর্শ না করে আমাকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। যে কারনে আমি গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্যদের মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। গভর্নিং বডির সভাপতি ডাক্তার এমএ জলিল এর বক্তব্য নিতে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।