ভূমিদস্যুদের হুমকিতে আতঙ্কিত ভুক্তভোগী খুলনার এস এম আল নাহিয়ান
- আপডেট সময় : ০৮:৫৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
খুলনা বিশেষ প্রতিনিধি (সোহাগ কাজি) : গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সরকারি দল আ’লীগের সাথে গা ঢাকা দিয়েছিল খুলনা অঞ্চলের চিহ্নিত ভূমিদস্যুরাও। আর্থিক প্রতারণা, বিক্রিত ভূমি বুঝিয়ে না দেয়া ও ভূমি গড়মিলের কারণে গ্রহিত অর্থ ফেরত না দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের ভয়ে দীর্ঘদিন পালিয়েই ছিল তারা। সম্প্রতি ভোল পাল্টে তারা বর্তমান প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ফের এলাকায় ফিরছে। মামলা-মোকদ্দমা করে বছরের পর বছর ঘুরেও সুরাহা না পাওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপে যৌথ বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে অসাধু নেতাদের ছত্রছায়ায় নগরীর লবণচরা এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু মিজানুর রহমান স্বপন নগরীর লবণচরা ও জিরোপয়েন্ট এলাকায় শুধু নয়, বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ভূমি জালিয়াতির সাথে সম্পৃক্ত। নগরীর খালিশপুরের বাসিন্দা মোঃ আব্দুস সালাম ও তার ছেলে এস এম আল নাহিয়ান এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবুল কাসেম ওই ভূমিদস্যুর সর্বশেষ শিকার।
উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে জমির সন্ধান করলে মিজানুর রাহমান স্বপন এবং উম্মে হাবিবা লিমা তাদের আনুমানিক দুইশ’ শতক সম্পত্তি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পিলজঙ্গ মৌজায় আছে বলে দালালের মাধ্যমে জানায়। যা শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী। আলোচনার প্রেক্ষিতে উম্মে হাবিবা লিমা কবলা দলিল মূলে ৩৫ শতক এবং ১৮৯ শতক জমি বায়না করে দিয়ে খালিশপুরের এস এম আল নাহিয়ানের কাছ থেকে অন্তত দুই কোটি পঁচাত্তর লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। জমির দখল স্বত্ব বুঝিয়ে নিতে যেয়ে বাধে বিপত্তি।
খোঁজ নিয়ে ক্রেতা এস এম আল নাহিয়ান জানতে পারেন, তারা ভূমিদস্যুদের ফাঁদে পড়েছেন। উক্ত জমি ভূমিদস্যু স্বপন এবং লিমা ২০১৬ সালে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখা থেকে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণের বিনিময়ে দায়বদ্ধ। সেই পাওনা অনাদায়ে উক্ত জমির বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়েরকৃত অর্থ ঋণ আদালত খুলনা মামলা চলমান (যার নং-৬০/২০২০)। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক সাউথ সেন্ট্রাল শিপইয়ার্ড শাখায় খন্ডকালীন ঋণ রয়েছে ওই জমির বিপরীতে। এই ভাবে এই সংঘবদ্ধ চক্র ব্যাংক থেকে একই জমি দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। আবার সেই জমি বিক্রির ফাঁদ পেতেও সহজ-সরল ক্রেতাদের কাছ থেকে লুফে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
অন্য সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের পিলজঙ্গ নিবাসী দরিদ্র লাইলি বেগমের সম্পত্তি সুকৌশলে হাতিয়ে নেয় খুলনা লবণচরা এলাকার ভূমিদস্যু স্বপন ও লিমা চক্র। ভুক্তভোগী লাইলী বেগম ৮ বছর আইনী লড়াই করে এখন সর্বশান্ত।
অন্যদিকে, জাল-জালিয়াতি প্রমাণাদি নিয়ে ভূমিদস্যু স্বপন ও লিমার কাছে ক্ষতিপূরণসহ টাকা ফেরত চাইলে খালিশপুরের এস এম আল নাহিয়ানকে সে সময় শেখ বাড়ির প্রভাবশালী যুবলীগ নেতাদের দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। উপায়ন্তু না পেয়ে এস এম আল নাহিয়ান বাদী হয়ে ভূমিদস্যু স্বপন, লিমা ও দালাল খলিলুর রহমানের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একের পর এক অতর্কিত হামলা চালানো হয় মামলার বাদীর উপর। গত ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক ভোল পাল্টে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এলাকায় ফিরে খালিশপুরের এস এম আল নাহিয়ানকে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে ভূমিদস্যূরা।
এসব বিষয়ে জানতে নগরীর ২০নং শিপইয়ার্ড রোড লবণচরার বাসিন্দা মিজানুর রহমান স্বপনের ব্যবহৃত মোবাইল (০১৯১১-৩৩৩৩৪৪) নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আর উম্মে হাবিবা লিমার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খালিশপুরের বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত এস এম আল নাহিয়ান বলেন, তিনটি মামলায় গ্রেফতার পরোয়ানা থাকলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে প্রতারিত অর্থ ফেরত চাওয়ায় সে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্নভাবে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আ’লীগের শাসনামলে শেখ পরিবারের ছত্রছায়ায় যুবলীগের প্রভাবে ভূমিদস্যুতা, ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে ও ব্যাংক থেকে লোনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। রাজনৈতিক ভোল পাল্টে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এলাকায় ফিরে সম্প্রতি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলাও করেছে। এছাড়াও তারা বর্তমানে প্রকাশ্যে আমার পরিবারের লোকজনদের বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি করিয়া প্রাণনাসের হুমকি দিচ্ছে। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি