সাতক্ষীরা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাত পোহালে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী  সমিতির নির্বাচন সাতক্ষীরায় জলবায়ু নায্যতার দাবি জানিয়ে দূর্যোগ কবলিত মানুষের সমবেত বিক্ষোভ সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু আক্রান্তে সাইদুল ইসলামের মৃত্যুু সাতক্ষীরায় সপ্তাহ ব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করলেন- মোস্তাক আহমেদ সাতক্ষীরা দেবহাটার শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন আটক সাতক্ষীরায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ও ফোর্সদের সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরায় দাফনের ৩ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন সাফ জয়ী তিন ফুটবলারের গণ সংবর্ধনা ২১ নভেম্বর

দুই যুগেরও বেশী সময়ে নির্মাণ হয়নি সাতক্ষীরা আশাশুনির ৬৫০মিটার বেড়ীবাঁধ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩ ১০৭ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা কন্ঠ ডেস্ক: দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে বাঁধ না থাকলেও নির্মাণ হয়নি আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকার ৬৫০ মিটার বেড়ীবাঁধ। খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্য ঘেরের সরু রিং বাঁধ দিয়ে। স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীর কোন বেড়ীবাঁধ নেই। সেখানে রিংবাঁধের উপর ভর করে রয়েছে স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদী।

১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি ৬ ব্যান্ড স্লুইচ গেট সংলগ্ন এলাকায় স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদীর বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী শ্রীউলা ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতবাড়ীসহ শত শত মৎস্য ঘের ভেসে যায়। সে সময় জোয়ার ভাটার কারণে স্লুইচগেট সংলগ্ন এলাকায় গভীর খালের সৃষ্টি হয়। এরপর এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘুরে রিং বাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেওয়া হয়। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০০৫ সালে মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ক্লোজার চাপান দিয়ে ঐ ২ হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। তৎকালীন তার মৎস্য ঘেরের বাঁধটিই অদ্যবধি পর্যন্ত ওয়াপদা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এরপর সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার আগে আবারো ২০২০ সালে আম্পানে উক্ত এলাকায় রিং বাধের ৪টি পয়েন্টে ভেঙ্গে ও সেই নিচু রিংবাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানিতে বসতবাড়ীসহ শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতায়াত দুরহ হয়ে পড়ে। সেই সময় কোন রেড়ীবাঁধ না থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল, রোগী, নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতায়াতে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এর পরেও অধ্যবধি পর্যন্ত সেখানে কোন বেড়ীবাঁধ নির্মাণ হয়নি। স্কুল শিক্ষক বিকাশ মন্ডল আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, এখানে ৬৫০ মিটার মৎস্য ঘেরের বাঁধের রাস্তা স্থানীয় জনগনের ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতায়তের জন্য কোন সরকারি রাস্তা নির্মান করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দুরের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় যাতায়াতের কোন সরকারি রাস্তা বা ইটের সোলিংও নেই এটা দুঃখজনক। স্থানীয় সাংবাদিক সমীর রায় বলেন, বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। অথচ আমাদের গ্রামসহ আশেপাশে যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়ী চাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ী রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়নি। তিনি আরও জানান, ভালো রাস্তা না থাকার কারণে এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যান এমনকি এ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারেনা। এ গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল আছে বর্ষা মৌসমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। এ এলাকার ছেলে মেয়েরা বর্ষার কাদাপানিতে ভিজেপড়ে তাদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এভাবেই তারা বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছেন। আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম হোসেনুজ্জামান বলেন, জমি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন বেড়ীবাঁধ নির্মান সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবির কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আফম রুহুল হক স্যারের তৎপরতায় গত কিছুদিন আগে জাইকা দয়ারঘাট-বলাবাড়িয়া এলাকায় নির্দিষ্ট সীমানায় ৫৫০ মিটার স্থায়ী বেড়ীবাঁধের মাপজরিপ সম্পূর্ন করেছেন। এটি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে টেন্ডার হবে বলে আশা করছি। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশিকুর রহমান বলেন, দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া বেড়ীবাঁধের বিষয়টা ইতিমধ্যে জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

দুই যুগেরও বেশী সময়ে নির্মাণ হয়নি সাতক্ষীরা আশাশুনির ৬৫০মিটার বেড়ীবাঁধ

আপডেট সময় : ০২:০৬:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩

সাতক্ষীরা কন্ঠ ডেস্ক: দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে বাঁধ না থাকলেও নির্মাণ হয়নি আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকার ৬৫০ মিটার বেড়ীবাঁধ। খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্য ঘেরের সরু রিং বাঁধ দিয়ে। স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীর কোন বেড়ীবাঁধ নেই। সেখানে রিংবাঁধের উপর ভর করে রয়েছে স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদী।

১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি ৬ ব্যান্ড স্লুইচ গেট সংলগ্ন এলাকায় স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদীর বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী শ্রীউলা ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতবাড়ীসহ শত শত মৎস্য ঘের ভেসে যায়। সে সময় জোয়ার ভাটার কারণে স্লুইচগেট সংলগ্ন এলাকায় গভীর খালের সৃষ্টি হয়। এরপর এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘুরে রিং বাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেওয়া হয়। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০০৫ সালে মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ক্লোজার চাপান দিয়ে ঐ ২ হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। তৎকালীন তার মৎস্য ঘেরের বাঁধটিই অদ্যবধি পর্যন্ত ওয়াপদা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এরপর সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার আগে আবারো ২০২০ সালে আম্পানে উক্ত এলাকায় রিং বাধের ৪টি পয়েন্টে ভেঙ্গে ও সেই নিচু রিংবাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানিতে বসতবাড়ীসহ শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতায়াত দুরহ হয়ে পড়ে। সেই সময় কোন রেড়ীবাঁধ না থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল, রোগী, নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতায়াতে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এর পরেও অধ্যবধি পর্যন্ত সেখানে কোন বেড়ীবাঁধ নির্মাণ হয়নি। স্কুল শিক্ষক বিকাশ মন্ডল আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, এখানে ৬৫০ মিটার মৎস্য ঘেরের বাঁধের রাস্তা স্থানীয় জনগনের ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতায়তের জন্য কোন সরকারি রাস্তা নির্মান করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দুরের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় যাতায়াতের কোন সরকারি রাস্তা বা ইটের সোলিংও নেই এটা দুঃখজনক। স্থানীয় সাংবাদিক সমীর রায় বলেন, বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। অথচ আমাদের গ্রামসহ আশেপাশে যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়ী চাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ী রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়নি। তিনি আরও জানান, ভালো রাস্তা না থাকার কারণে এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যান এমনকি এ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারেনা। এ গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল আছে বর্ষা মৌসমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। এ এলাকার ছেলে মেয়েরা বর্ষার কাদাপানিতে ভিজেপড়ে তাদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এভাবেই তারা বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছেন। আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম হোসেনুজ্জামান বলেন, জমি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন বেড়ীবাঁধ নির্মান সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবির কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আফম রুহুল হক স্যারের তৎপরতায় গত কিছুদিন আগে জাইকা দয়ারঘাট-বলাবাড়িয়া এলাকায় নির্দিষ্ট সীমানায় ৫৫০ মিটার স্থায়ী বেড়ীবাঁধের মাপজরিপ সম্পূর্ন করেছেন। এটি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে টেন্ডার হবে বলে আশা করছি। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশিকুর রহমান বলেন, দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া বেড়ীবাঁধের বিষয়টা ইতিমধ্যে জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।