গণ্ডমূর্খের গলায় সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র’ ঠিক যেন বানরের গলায় মুক্তার হার!
- আপডেট সময় : ০৬:০৩:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪ ৮১১ বার পড়া হয়েছে
জাতির বিবেক সাংবাদিক সে যদি হয় মুর্খ, তাহলে সে জাতির জন্য কতটা কল্যাণকর ও বর্তমান ঘরে ঘরে শিক্ষিত সমাজের জন্য কি কি উপকারে আসবে এটাই বুঝতে পারছি না। তাই মনের বিড়ম্বনা দূরীকরণে সমগ্র জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছি, যদি কেউ বলতে পারেন আমাকে জানাবেন?
যদি না-ই বলতে পারেন তাহলে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করছেন না কেন?
২০০৬ সাল থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি শুরু করে একটা পর্যায়ে এসে সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়েছি। বর্তমান ২০১৭ সালে এসে দীর্ঘ ১৭ বছর অতিক্রম করে একজন সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগকারী ও পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে এই মহান পেশায় উৎসর্গ করে যখন দেখি চোখের সামনে জাতির বিবেককে রসাতলে দিচ্ছে কিছু অনভিজ্ঞ, অশিক্ষিত ও গণ্ডমূর্খ বানরের ! তখন মনটা কেঁদে উঠে, নিজেকে নিজেই মারতে ইচ্ছে করে। অশিক্ষিত বানরদের লাগাম টেনে ধরে, সমগ্র জাতির মহা বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব কাদের?
অল্প শিক্ষিত হলেও মানা যায়, একেবারে গণ্ডমূর্খ যদি সাংবাদিকতা পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এটা সমাজের জন্য হাস্যকর রুপ নিচ্ছে। আর অভিজ্ঞ,শিক্ষিত ও প্রকৃত সাংবাদিকদের লজ্জাকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে। এটার প্রভাব গণমাধ্যমের উপরও পড়ছে। কারণ গণমাধ্যমের কিছু অনভিজ্ঞ অসাধু কতৃপক্ষ কোনপ্রকার শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই-বাছাই না করেই অর্থের লোভে ‘বানরের গলায় ঝুলিয়ে দিচ্ছেন মুক্তার হার’। এটা সাংবাদিক সমাজের সমস্যা, তাই সমাধানটাও সাংবাদিকদের করতে হবে। দেশব্যাপী অভিজ্ঞ প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রতিবাদ করতে হবে আর গণমাধ্যমকে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। এই অশিক্ষিত ও অপ-সাংবাদিকতার বিষয়ে মফস্বলে থেকে দেখেছি, অভিজ্ঞ ও প্রকৃত সাংবাদিকদের একটা অংশের কারণে অশিক্ষিত ও অপ-সাংবাদিকতার হার বাড়ছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘ সময় সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগকারী প্রকৃত সাংবাদিকদেরা যদি সোচ্চার হন তাহলে মনে হয় কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে এসব অশিক্ষিত ভেড়ারদল। এছাড়াও সাংবাদিকদের সকল সংগঠনকে একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ করতে হবে।
এভাবে চলতে থাকলে মূর্খ আর অশিক্ষিত মানুষদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে জাতির বিবেক।
বর্তমানে অশিক্ষিত ও হলুদ সাংবাদিকদের দ্বারা সাধারণ মানুষদের হয়রানি এমনকি সরকারি কর্মকর্তাদের সাথেও সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের খবরও দেখা গিয়েছে। তাদের দেখে মনে হয় সাংবাদিকতা পেশায় মন ভরছে না, তাই ক্যাডার হওয়ার চেষ্টা করছে। অশিক্ষিত কান্ডজ্ঞানহীন বানর গলায় সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে ফেসবুক পেজে দাঁত মেলিয়া যে ভঙ্গিতে দূর্ঘটনার খবর প্রচার করে তাতে প্রকৃত সাংবাদিকদের নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। কোন নৈতিকতায় একজন মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কান্নার ভিডিও করে হাসিমুখে প্রচার করা যায় আর রাজনৈতিক নেতাদের তেলমারা যায় এটা অশিক্ষিতরা বান্দরেরা ভালো বোঝে।
সাংবাদিকদের স্বাভাবিক কাজের ধরণ সমাজের অসংগতি তুলে ধরা, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সরব থাকা, পক্ষপাতমূলক আচরন না করা। আর এই পেশায় গণ্ডমূর্খরা এসে করছে তার উল্টো। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতারা আগে ক্যাডার পুষতেন, আর এখন পোষেন সাংবাদিক।
অপ-সাংবাদিকতার এই কাতারে আরও মহল আছে যারা সাংবাদিকতায় কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই নামমাত্র একটা অনলাইন পত্রিকা খুলে গণমাধ্যম জগতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদবির বদৌলতে বাণিজ্যিক সাংবাদিকতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। কিছু প্রিন্ট পত্রিকার কতৃপক্ষও পাওয়া গিয়েছে যারা সামন্য অর্থের জন্য প্রতিদিন অহরহ অশিক্ষিত সাংবাদিক তৈরি করছেন। যাদের অপ-সাংবাদিকতার কালো ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে অভিজ্ঞ ও প্রকৃত সাংবাদিকদের আলোকিত বিবেক।
দেশব্যাপী অনেক যোগ্য, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত সাংবাদিকও গণমাধ্যম কতৃপক্ষ আছেন, যারা চাইলে এই অপ-সাংবাদিকতা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। সাংবাদিকতায় যে বেশি শিক্ষিত হলেই তিনি ভালো সাংবাদিক হবেন তেমনটা নয়। তবে সর্বনিম্ন একটা শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়। যেটা প্রত্যেক গণমাধ্যমের কতৃপক্ষ অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিবেন। বর্তমানে মূর্খ, অশিক্ষিত ও হলুদ সাংবাদিকের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, এটা সমাজের জন্য অতন্ত্য ক্ষতিকর।
কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় মূর্খ সাংবাদিক গিয়ে বসছে সমাজের সন্মানিত চেয়ারে আর একজন প্রকৃত সাংবাদিক পিছনে দাঁড়িয়ে। কি নিদারুণ দৃশ্য।
জনমনে এর প্রভাব যে কতটা নেতিবাচক সেটা চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষের সাংবাদিকদের নিয়ে আলোচনা শুনলে বোঝা যায়। আস্তে আস্তে অশিক্ষিতরা দলে ভারি করছে, প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জায়গায় কমপক্ষে একজন হলেও সৃষ্টি হচ্ছে। তারা দলে ভারি করে হানা দিচ্ছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। চাকুরিজীবীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। সাধারণ জনগণকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বিপদগ্রস্ত করছে। আবার বুক ফুলিয়ে বলছে, আমি কিন্তু ভাই/দাদার লোক সাংবাদিক। তাছাড়াও পদপদবীর অভাব নেই মূর্খদের। দেশের সর্বত্র রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে কিছু অনভিজ্ঞ,অশিক্ষিত ও গণ্ডমূর্খ সাংবাদিকরা দখল করে ফেলেছে প্রকৃত সাংবাদিকদের চেয়ার, যা থেকেই শুরু হয়েছে প্রকৃত সাংবাদিকদের সামাজিক মূল্যায়ন। আর প্রকৃত সাংবাদিকেরা মূর্খদের পাগলামিতে নিজেদের আত্মসম্মানহানীর আশংকায় নিজেদেরকে কোনঠাসা করে রেখেছেন। কারণ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরেও মূর্খ সাংবাদিকরা বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এই সমস্যা উত্তরণের পথ প্রকৃত সাংবাদিক সমাজকেই খুজতে হবে। কারণ সৃষ্টিটা সাংবাদিক সমাজ থেকেই। আমার মনে হয় সাংবাদিক সমাজ যদি চাই এটা বন্ধ হওয়া সম্ভব। যেকোনো গণমাধ্যম যদি সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা,সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান সম্পূর্ণ ভাবে যাচাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিকে সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র প্রদান করেন আর প্রকৃত সাংবাদিকেরা যদি একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ করেন তাহলে মনে হয় একটু হলেও কাজ হবে। বয়সে হয়তো আপনার ছোট তবে লম্বা একটা অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন এবং ভুলটা ধরিয়ে দিলে খুশি হবো। সারাবছরেও একটা নিউজ লিখতে দেখিনাই তারা ঠিকই জেলা/উপজেলা জেলার বিভিন্ন প্রোগ্রাম গুলোতে সামনের চেয়ার দখল করে জানান দিচ্ছেন আমি গণ্ডমূর্খ সাংবাদিক হলেও চেয়ারটা আমার! এটা আমার একান্ত অভিমত নয় আপনিও জরিপ চালিয়ে দেখতে পারনে বর্তমানে অপ- সাংবাদিকতার কারনে প্রকৃত পক্ষে যারা এই পেশাটিকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে দেখেন, সেই মহান ব্যক্তিগুলো আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। যেকোন পেশায় যে সকলে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হবে এমনটা নয়, তবে সাংবাদিকতা পেশায় অভিজ্ঞতা না থাকলেও একবারে অশিক্ষিত ও গণ্ডমূর্খকে মেনে নেওয়া যায় না!
দীর্ঘ ১৭ বছর এই মিডিয়া জগতে থেকে আমার এমন মনে হয়েছে, ভুল হলে ক্ষমা করবেন। একজন অবহেলিত পিছিয়ে পড়া সাংবাদিক, জানতে চাই জাতির বিবেককে।
সুমন চক্রবর্তী
গণমাধ্যমকর্মী ও মুক্ত লেখক