এক কুকের দাপটে দিশেহারা পাউবোর কর্মকর্তারা
- আপডেট সময় : ০২:৫০:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৩ ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
শেখ ইলিয়াস হোসেনঃ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা জেলা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কাছে বিধ্বস্ত, এই জেলার পাউবো প্রশাসনও এক কুকের দাপটে দিশেহারা।
জানা গেছে, এই কুকের নাম শেখ কামরুজ্জামান, দপ্তর: সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১। একটা সময়ে সহকারী কুকের কাজ করলেও তিনি এখন গাড়ি চালক। কাগজে কলমে রাধুনি তবে বাস্তবে তিনি একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। ছেলের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে সাতক্ষীরা পাউবোর পুরো উন্নয়ন কাজের নিয়ন্ত্রণ এখন কামরুজ্জামানের হাতে। অভিযোগ রয়েছে কামরুজ্জামানের সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম।
সাতক্ষীরার পাউবো-১ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নের জন্য সরকার কয়েকশত কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ও টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মান করার জন্য। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ডেল্টা প্ল্যানের কাজ বাস্তবায়নে বাঁধা গাড়িচালক শেখ কামরুজ্জামান। তার স্বেচ্ছাচারিতা, ঠিকাদারী ব্যবসাসহ, অনিয়মের কারণে তালগোল পেকে আছে অফিসে।
অভিযোগ রয়েছে, কামরুজ্জামানের সাতক্ষীরা পাউবো-১ এ বর্তমানে তার পদ না থাকলেও উক্ত ডিভিশনে নিজ জেলা সাতক্ষীরাতে ২২ বছরেরও অধিক সময় চাকরী করছে। ফলে অফিসে একক রামরাজত্ব কায়েম করছে। রাধুনি পদে চাকরি করলেও নিজে রান্নার কাজ করেন না। তার কাজ করেন পিয়ন গোপাল ও মোবারক।
গাড়ি চালকের দখলে চেয়ার-টেবিল ও আলমারি: পাউবো -১ অফিসে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামরুজ্জামান রাধুনি হলেও কাজ করেন গাড়িচালকের। কিন্তু তিনিই আবার অফিসের বিভাগীয় হিসাব শাখার চেয়ার-টেবিলসহ অন্তত ১০টি আলমারি দখল করেছেন। আর এতে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন তার ঠিকাদারী বন্ধু পাউবো-১ এর হিসাব করনিক শফিকুল ইসলাম। গভীর মিল কুক কামরুজ্জামান ও শফিকুল ইসলামের। কোনো নিয়মিত গাড়ীচালক ও সিনিয়র হিসাব সহকারী পাউবো-১ এ টিকতে পারেনা তাদের ক্ষমতার দাপটে। সরকারি অফিসের আসবাবপত্র ও আলমারি দখল করে সেখানে বসেই ঠিকাদারী ব্যবসা করে যাচ্ছে কামরুজ্জামান। তার ঠিকাদারী লাইসেন্স এর নাম- মেসার্স রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। রাফিদ তার ছেলের নাম। এই লাইসেন্স দিয়ে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুল খায়েরের সময়ে একাধিক ডিপিএম কাজ পেয়েছে কামরুজ্জামান। এক পায়ে সমস্যা নিয়ে গাড়িচালক না হয়েও ঠিকাদারী ব্যবসা ও গাড়ির তেল চুরি করার জন্য ঝুঁকি নিয়ে অফিসের গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে কামরুজ্জামান। কামরুজ্জামানের অন্যতম সহযোগী ক্যাশিয়ার শফিকুল ইসলাম তার বাসা সাতক্ষীরার স্থানীয়। সব কিছু দেখেও নীরব সাতক্ষীরা পাউবো প্রশাসন। দিন দিন আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কুক কামরুজ্জামান।
সাতক্ষীরা পাউবো হতে কামরুজ্জামানকে একাধিকবার বদলি করা হলেও টাকার জোরে বারবার তা বাতিল হয়ে যায়। সাতক্ষীরাতে যোগদানের পরেই রীতিমতো আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে কামরুজ্জামান। শহরের ইটাগাছা ওয়াপদার মোড় হতে পশ্চিম দিকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূরে ২(দুই) কোটি টাকা মূল্যের পাঁচতলা ফাউন্ডেশন বাড়ির প্রথম তলার কাজ শেষ। সাতক্ষীরার বিভিন্ন শাখায় লক্ষ লক্ষ টাকার একাধিক ব্যাংক হিসাব ও ডিপিএস আছে তার স্ত্রী রেখা জামান ও নিজ নামে। স্থানীয় কয়েকজন স্টাফকে নিয়ে একটি কঠিন সিন্ডিকেট আছে তার সাতক্ষীরা পাউবো-১ও ২ এ। ২০১৮ হতে ২০২২ সালে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুল খায়েরের যোগসাজশে বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে একাধিক বার ভারত ভ্রমণ করেছে কামরুজ্জামান। একাধিক বার নিউজ হলেও তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো প্রশাসন। টাকার জোরে বারবার রীতিমতো তার সব অন্যায় ধামাচাপা পড়ে যায়। সাতক্ষীরা বিখ্যাত চিংড়ি, আম ও সুন্দরবনের মধু পাঠিয়ে উপরমহলকে ভুলিয়ে রাখে তেলবাজ কামরুজ্জামান। সাতক্ষীরা পাউবোতে থেমে নেই তার ঠিকাদারী ও সাবঠিকাদারী ব্যবসা। এ যেন এক রাধুনির কব্জায় সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে নানাভাবে কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।
কামরুজ্জামানের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ সালাউদ্দিন দৈনিক সাতক্ষীরা কন্ঠকে বলেন, আমি অল্প সময়ে এসেছি, আসার পরে তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ শুনেছি, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় শেখ কামরুজ্জামান ২২ বছর এখানে কিভাবে আছে এবং বর্তমানে তো কুক পদটি সাতক্ষীরা পাউবো-১ এর সেটআপেও নেই, তবে প্রকৌশলী জনাব মো: সালাউদ্দিন জানান বোর্ড তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমি কি করতে পারি। তিনি আরো বলেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো। তবে পাউবো-১ অফিস সূত্রে জানা যায় পদ না থাকলেও রীতিমতো এই অফিস থেকে বেতন নিয়ে যাচ্ছেন শেখ কামরুজ্জামান।