গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও ইটাগাছার তুহিন
- আপডেট সময় : ১০:৫২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামক অনলাইন ব্যবসায় প্রতারণার ফাঁদ
গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও ইটাগাছার তুহিন
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে বাংলালিংকের লোগো ব্যবহার
ছাত্র উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের ছবি ব্যবহার
মো. মাজহারুল ইসলাম : ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামক একটি অনলাইন ব্যবসায়ে প্রতারিত হয়ে কয়েক কোটি টাকা খুইয়েছেন সাতক্ষীরা শহরের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। প্রত্যেকে মোটা অংকের লাভের আশায় ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা বসতিপাড়া (ভাগাড়) এলাকার আলী গাজীর ছেলে মো. তুহিন হাসান গাজী ও তার ছোট ভাই পলাশ হাসান গাজী মৌখিক ভাবে ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের একটি অনলাইন ব্যবসার প্রচারণা শুরু করে গ্রাহক টানতে থাকে। মোটা অংকের লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তারা ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামক অনলাইন ব্যবসায় ২০ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংকের টাকা বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে গ্রাহকদের। প্রথম প্রথম লাভের অংশ লোভনীয় হওয়ায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রাহক বাড়তে শুরু করে। ইতিমধ্যে চলতি জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকার তিন শতাধিক গ্রাহক ওই ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের অনলাইন ব্যবসায় তাদের টাকা বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগকারী সদস্যদের নিয়ে টেলিগ্রাম গ্রæপ খুলে সেখানেই যাতবীয় তথ্য আদান প্রদান করা হত। সেই গ্রæপে তিনশত আঠাশ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যরা। এরপর জানুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের ওই অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গ্রাহকরা প্রবেশ করতে না পেরে সিনিয়র এজেন্ট তুহিন হাসান গাজীসহ তার ছোট ভাই পলাশ হাসান গাজীকে খুঁজতে থাকে। মোবাইলে তাদের খোঁজ না পেয়ে বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাদের সন্ধান না পাওয়ায় গ্রাহকরা তখন বুঝতে পারেন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা খুইয়েছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, তাদের কাছ থেকে ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের ওই অনলাইন ব্যবসায়ের মাধ্যমে প্রতারণা করে ইটাগাছা এলাকার তুহিন হাসান গাজী ও তার ভাই পলাশ হাসান গাজী সাতক্ষীরা শহরের তিন শতাধিক গ্রাহকের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। ভুক্তভোগী ইটাগাছা কুখরালী মোড়ের রোকেয়া মটরস এর স্বত্ত¡াধিকারী আকরাম হোসেন জানান, ‘তুহিন ও পলাশের প্ররোচনায় তিনি ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের অনলাইন ব্যবসায়ে ধাপে ধাপে ৬ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রথম পর্যায়ে কিছু টাকা উত্তোলন করতে পারলেও পরে লাভের টাকাসহ প্রায় আট লক্ষাধিক টাকা খুইয়েছেন’। ইটাগাছা এলাকার শাকিল হোসেন জানান, ‘তিনিও তুহিন ও পলাশের প্ররোচনায় ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের অনলাইন ব্যবসায়ে ধাপে ধাপে প্রায় এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। শুক্র-শনিবার বাদে সপ্তাহের পাঁচ দিন উত্তোলনের সময় থাকায় সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি রবিবার টাকা উত্তোলন করার জন্য ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে জানতে পারেন তুহিন গাজী ও তার ভাই পলাশ গাজীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’। অপর এক ভুক্তভোগী মো. সুমন হোসেন জানান, ‘তুহিন ও পলাশের প্ররোচনায় ভিওন বাংলাদেশ’ নামের অনলাইন ব্যবসার ওয়েবসাইটে বাংলালিংকের লোগো ব্যবহার করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো এই প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলালিংক জড়িত। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাবে না’। তিনি আরো জানান, ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের অনলাইন ব্যবসায়ের ওয়েবসাইটে বর্তমান সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের এবং কয়েকজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের ছবি ব্যবহার করে তৎক্ষণাত মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। আমি সেই বিশ^াসেই এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়ে গেছি’। এছাড়া খোঁজ নিয়ে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ‘এমএলএম সিস্টেমে ‘ভিওন বাংলাদেশ’ নামের অনলাইন ব্যবসার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শহরের পলাশপোল এলাকার বাসিন্দা সুমি খাতুন খুইয়েছেন এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা, ইটাগাছা এলাকার নয়ন হোসেন দুই লাখ, একই এলাকার আতিয়ার রহমান পঞ্চাশ হাজার, সুজন হোসেন দুই লাখ ও বাঁকাল এলাকার মো. জিল্লু দশ লাখ টাকা খুইয়েছেন’। এ ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানকালে আরো জানা গেছে, ‘অভিযুক্ত তুহিন ‘ভিওন বাংলাদেশ’ এর সাতক্ষীরার সিনিয়র এজেন্ট হিসেবে সকলের কাছে পরিচয় দিতেন। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় অফিস হিসেবে ঢাকা গুলশানের একটি ঠিকানা তিনি ব্যবহার করতেন’।