প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার আত্মহত্যার ঘটনায় তিন শিক্ষকসহ সভাপতি গ্রেপ্তার
- আপডেট সময় : ০৩:৩২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩ ১৫৮ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টারঃ
প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারের আত্মহত্যার ঘটনায় বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে র্যা ব-৬ এর সহযোগিতায় শ্যামনগর থানা পুলিশ রাজধানী ঢাকার রমনা থানার অন্তর্গত একটি বাসা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-শেখ আব্দুর রহিম, মোঃ আলী মোর্তজা, আব্দুল মান্নান, আব্দুল মজিদ, জাকির হোসেন ও মোঃ সালাউদ্দীন। তাদের মধ্যে শেখ আব্দুর রহিম বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও স্থানীয় কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান। এছাড়া আব্দুল মান্নান, আব্দুল মজিদ ও মোঃ সালাউদ্দীন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত। আটক অপর দু’জন যথাক্রমে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বাদি।
উল্লেখ্য, ৪ জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলা সদরের গোপালপুর গ্রামের ভাড়া বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন আবুল বাসার। তিনি উপজেলার কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা আত্মসাৎ এবং অর্থ তছরুফসহ একাধিক অভিযোগে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ হতে শোকজ করায় তিনি আত্মহত্যা করেন বলে তার পরিবারের দাবি। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভীন ৪ জানুয়ারি রাতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে মামলা করে।
এ দিকে অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও বিগত (পরিচালনা পর্ষদের) কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে মুলত আবুল বাসার আত্মহত্যা করেন। অভিযোগ রয়েছে আগের কমিটি ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বায়ান্ন লাখ টাকার বিনিময়ে ল্যাব সহকারী, অফিস সহায়ক, নৈশ প্রহরী এবং আয়া পদে চারজনকে নিয়োগ দেন। গত ডিসেম্বরে নুতন কমিটি দায়িত্বে আসার পর আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে দায়ি করে ২ জানুয়ারি একটি শোকজ নোটিশ পাঠায়। এ সময় আগের কমিটির আত্মসাৎকৃত সমুদয় টাকা বিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা করার নির্দেশনা দিয়ে অন্যথা তাকে চাকরিচুত্য করার হুমকিও দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি না পাওয়ার অভিযোগে মারুফা খাতুন নামের এক প্রার্থীর দায়েরকৃত মামলা নিয়েও আবুল বাসার চাপে ছিলেন। নিজের বিপদের সময়ে আগের মেয়াদে দায়িত্বে থাকা কমিটি ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষককে পর্যন্ত তিনি পাশে পাচ্ছিলেন না।
স্থানীয় গ্রামবাসী আকতার হোসেন ও মনিরুজ্জামান জানায় দুই কমিটির গ্যাড়াকলে আবুল বাসার মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা পকেটে না ঢুকলেও নুতন কমিটি তাকে ২০২২ ও ২০২১ সালে নিয়োগ প্রাপ্তদের নিকট থেকে টাকা ফেরত দিতে অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করছিল। তারা আরও জানান পুর্বের কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম কৈখালী ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। এদিকে বতমান কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুর রহিম গত ইউপি নির্বাচনে রেজাউলকে পরাস্ত করে। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক ক্ষমতাধর দুই ব্যক্তির মধ্যে পারস্পারিক দ্বন্দ্বের বলি হয়েছে প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার।
এ দিকে তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, অন্যান্য আসামীদের সহযোগিতায় মারুফা খাতুন প্রধান শিক্ষক আবুল বাশারের নামে মিথ্যা ধর্ষণের চেষ্টা ও টাকা আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন। চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষককে হয়রানি শুরু করেন। বিরোধ মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষক আব্দুল মজিদ, সহকারি শিক্ষক সালাহউদ্দিন, শিক্ষক আব্দুল মান্নান, অভিভাবক সদস্য মারুফা খাতুন ও জাকির হোসেনের যোগসাজসে বর্তমান সভাপতি আব্দুর রহিম ও অভিভাবক সদস্য আলী মোর্তুজা প্রধান শিক্ষকের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রধান শিক্ষক তাদেরকে সম্প্রতি পাঁচ লাখ টাকাও দেন। বাকী ৪৫ লাখ টাকার জন্য আলী মোর্তুজাসহ অন্যান্যরা প্রধান শিক্ষককে চাপসৃষ্টি ও হুমকি অব্যাহত রাখে। এতে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক সভাপতির কাছে ছুটি চান। সভাপতি তা মঞ্জর না করে গত ২ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষককে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেন। এতে প্রধান শিক্ষক মানসিক হারসাম্য হারিয়ে ফেলে বুধবার গোপালপুরে তার ভ্য়ারা ভাই ইটালী প্রবাসী আবু সাঈদের বাড়ির ভাড়া বাসার সামনে আমগাছে গলায় তোয়ালের ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
খুলনা র্যা ব-৬ এর সাতক্ষীরা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর গালিব জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে শনিবার রাত ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকা থেকে ওই ছয় আসামীকে আটক করা হয়। রবিবার ভোরে তাদেরকে শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করা হয়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, গ্রেপ্তারকৃত ছয় আসামীকে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।