কেন্দ্রীয় দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৬:৩০:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
সাতক্ষীরা কন্ঠ ডেস্ক: সাতক্ষীরার শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ওজায়েরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ছয় বছরের দায়িত্বকালে ভুয়া কাগজ তৈরী করে প্রভাষক (আরবী) নিয়োগসহ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। একইভাবে মোটা টাকার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, পরিত্যক্ত ভবন বিক্রয়সহ প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহার করে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনা তদন্তের দাবিতে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি ডাঃ আব্দুল জলিল আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায় ২০১৮ সালে মোঃ ওজায়েরুল ইসলাম শ্যামনগর কেন্দ্রীয় কামিল এমএ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এসময় মাদ্রাসার সুপার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও প্রভাব খাটিয়ে তিনি সরাসরি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন। এছাড়া অধ্যক্ষ পদে যোগদানের দুই বছর পর তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোঃ শফিকুল ইসলামকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের আরবী বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। তবে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ না থাকায় বেতন ছাড় করার উদ্দেশ্যে শফিকুলকে তিনি কাগজ-কলমে ২০০৫ সালে নিয়োগ দেখান। যদিও তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায় শফিকুল ইসলাম ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উপজেলার ফয়সালাবাদ আলিম মাদ্রাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অনুসন্ধানকালে আরও তথ্য পাওয়া যায় একজন শিক্ষকের বেতন ছাড় করার চেষ্টায় ২০২০ সালে তিনি গুরুতর এক জালিয়াতির আশ্রয় নেন। পরিচালনা পর্ষদকে সম্মত করাতে না পেরে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তৎকালীন ইউএনও সোলায়মান মন্ডল, সহ-সভাপতি ডাঃ অজিয়ার রহমান ও মহা-পরিচালকের প্রতিনিধি অধ্যাপক কেএম আওরঙ্গজেবের স্বাক্ষর জাল করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায় অর্থের বিনিময়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী শফিকুল ইসলামের নাম মাদ্রাসা অধিদপ্তরে প্রেরণ করেন তিনি। যদিও বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের হাদিস বিভাগের শিক্ষক শাহাজান সিরাজের উপাধ্যক্ষ হওয়ার কথা। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে উক্ত অধ্যক্ষ কতৃপক্ষের নিকট তিরস্কৃত হন।
উক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে ২০২২ সালে প্রায় ৩৮ লাখ টাকার বিনিময়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর চারজন কর্মচারী নিয়োগ দেন তিনি। আবার ২০২৩ সালের নভেম্বরে একতলা একটি পরিত্যক্ত ভবন নিজ উদ্যোগে বিক্রয় করলেও কোন টাকা তিনি মাদ্রাসা ফান্ডে জমা দেননি। ওজায়েরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পুর্ববর্তী কর্মস্থলে চাকুরী দেয়ার নামে তিনি মাওলানা জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুল বারীসহ ১৪ জনের নিকট থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আদায় করেছেন। চাকরি দিতে ব্যর্থ হলেও অদ্যাবধি তিনি কাউকে কোন টাকা ফেরত না দেয়ায় সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অভিযোগ করেছেন তারা।
মাদ্রাসার শিক্ষক শাহজান সিরাজ জানান অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে তিনি মাদ্রাসাকে কামিল স্তরে উন্নীত করেন। তবে কামিল স্তরে উন্নীত করতে উপাচার্যের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের উপাধ্যক্ষ পদের বেতন ছাড় করার সময় তার স্বাক্ষর জাল করেন ওজায়েরুল। পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টির তদন্তভার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপর থাকলেও ছয় মাসেও তার অগ্রগতি নেই।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত ওয়াজেরুল ইসলাম জানান শফিকুল ইসলামের প্রথম নিয়োগ ননএমপিও নিয়োগ ছিল, পরবর্তীতে বিষয়টি সমন্বয় করা হয়। এছাড়া স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনার ইতিমধ্যে তদন্ত হলেও বিষয়টি অপেক্ষামান আছে, দাবি করেন তিনি। এছাড়া উপাচার্য্যরে নামে ১৬ লাখ টাকা গ্রহনসহ অন্যান্য সকল অভিযোগকে তিনি মিথ্যা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন জানান এখনো কোন লিখিত অভিযোগ তার হাতে পড়েনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।